পটুয়াখালী প্রতিনিধি: কোচিং ফি’র অজুহাতে শিক্ষার্থীদের থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এ টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে না কোনো রশিদও।
আসন্ন এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ চলাকালীন এ বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ফরম পূরণে শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোচিং কিংবা অতিরিক্ত ক্লাস করানোর অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি এক থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।
অথচ ১ নভেম্বর বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের যে সকল শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করবে তাদের কাছ থেকে বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত ফি কোন ক্রমেই আদায় করা যাবে না।
কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত এই ফি’র অতিরিক্ত ফি আদায় করলে তাৎক্ষনিক বরিশাল বোর্ডের ই-মেইলে তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট অভিভাবকগণকে অনুরোধ করা হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া সারাদেশে এবার ফরম পূরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়তি টাকা আদায় বন্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাঠে নেমেছেন।
নির্ধারিত ফি’র বাড়তি টাকা আদায় করলেই দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ অভিভাবকদের জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
অথচ এতো কড়াকড়ির পরও এই উপজেলার ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১২টি দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই ফরম পূরণ চলাকালীন কোচিং কিংবা অতিরিক্ত ক্লাসসহ বিভিন্ন ফি’র অজুহাতে টাকা আদায় করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সাজির হাওলা আকবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসা, চরমোন্তাজ সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসা, আমলিবাড়িয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও বড়বাইশদিয়া এ হাকিম মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং চরগঙ্গা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায় ফরম পূরণের পাশাপাশি কোচিং ও অতিরিক্ত ক্লাসসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি বাড়তি ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।
এতে দুস্থ-অসহায় পরিবারের শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার সাজির হাওলা আকবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থী তাদের ফরম পূরণে মোট ৪০০০ টাকা বিদ্যালয়কে দিতে হয়েছে বলে জানায়। তারা বলেন, ফরম পূরণে ২০০০ টাকা নিয়েছে। আবার অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য ২০০০ টাকা নিয়েছে।
তবে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে ওই মাদ্রাসার সুপার আব্দুর রহমান কাজী জানান, আমরা বোর্ডের নির্দেশ মতোই নেই। অতিরিক্ত নিবো কেন?
তিনি বলেন, বোর্ডের ফি প্রায় ১৪০০ টাকার মতো। হয়তো আরও ১০০ টাকা নেই।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বড়বাইশদিয়া এ হাকিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্র অভিভাবক বলেন, ‘আমি দিনমজুর কাজ করি। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লেখাপড়া করাই। এবার আমার ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিবে।
অনেক কষ্ট করে ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করছি। কিন্তু শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিছে, কোচিং করাতে হলে ফরম পূরণের ফির সাথে বাড়তি ১০০০ টাকা নগদ দিতে হবে। টাকা না দিলে কোচিং তারা করাবে না। তাই বাধ্য হয়ে তাদেরকে টাকা দিয়েছে।’
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহতাব হোসাইন বলেন, ‘ফরমপূরণে ১৭-১৮শত নিছি আমরা। বোর্ডের ফি নির্ধারিত ফি ১৬৩০-১৭২০।
আর কোচিং বাবদ কোন টাকা নেওয়া হয় নাই। কোচিংয়ের টাকা যদি পরে দেয় দেবে। এক হাজার টাকা যদি দেয় তাহলে তারা পড়বে। আর না দিলে না।’
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র চাইতে বাড়তি কোন টাকা নিতে পারবে না। সকল সুপার ও প্রধান শিক্ষককে এবিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। নিয়মের বাহিরে কেউ কিছু করলে অভিভাবক লিখিতভাবে আমাদের দিলে আমরা বোর্ডে পাঠিয়ে দিব।’ এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘বোর্ড যখন কঠোর হয়েছে যে, অতিরিক্ত টাকা নেয়া যাবে না। তখনি তারা (শিক্ষকরা) আবার কোচিংয়ের নাম করে টাকাটা জায়েজ করছে।
এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।